একদা এমন এমন একজন পাথর কাঠুরেপাথর কাঠুরে ছিলেন যিনি নিজেকে নিয়ে এবং নিজের জীবনের অবস্থান নিয়ে খুবই অসন্তুষ্ট ছিলেন।
একদিন তিনি এক ধনী ব্যবসায়ীর বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। উন্মুক্ত প্রবেশদ্বার দিয়ে তিনি, বাড়ির ভেতরে অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিসপত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ দর্শনার্থীদের দেখতে পান। তখন তিনি মনে মনে ভাবলেন, ব্যবসায়ী লোকটি কতই না ক্ষমতাবান! তিনি খুব ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়লেন আর নিজে নিজে ব্যবসায়ী লোকটির মতো হওয়ার জন্য ইচ্ছা পোষণ করলেন।
আশ্চর্যের বিষয় হল, তিনি হঠাৎ করে একটি ব্যবসায়ী লোকটির মতো নিজেও একজন ব্যবসায়ী হয়ে গেলেন, তবে তিনি ব্যবসায়ীর চেয়েও কল্পনারও অধিক বিলাসিতা এবং ক্ষমতা উপভোগ করতে লাগলেন। কিন্তু তার চেয়ে কম ধনী লোকেরা তাকে হিংসা ও ঘৃণা করতে লাগলো। কিছু দিন যেতে না যেতেই তিনি দেখতে পেলেন একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে তার বেশ কিছু পরিচারক ও সৈন্যদের পাহারায় সেডান চেয়ারে বহন করে নিয়ে যাচ্ছে বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে।
যত ধনীই হোক না কেন, তার শোভাযাত্রার সামনে দিয়ে যাওয়া সবাই তার কাছে মাথা নত করছিল "এই কর্মকর্তা কতটা শক্তিশালী! তা দেখে পাথর কাঠুরে ভাবলেন, “আহা, আমি যদি একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হতে পারতাম!”
তারপর তিনি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হয়ে ওঠেন। তাতে তিনি তার সুসজ্জিত সেডান চেয়ারে বসে সর্বত্র চড়ে বেড়ান যাতে তার চারপাশের লোকেরা তাকে ভয় পেলেও আর কিছু লোক তাকে ঘৃণা করে। সময়টি গ্রীষ্মকাল ছিল বলে কর্মকর্তার আটালো সেডান চেয়ারে বসতে খুব অস্বস্তি বোধ করেছিলেন। তিনি সূর্যের দিকে তাকান। লক্ষ্য করেন সূর্য খুব গর্বের সাথে আকাশকে আলোকিত করছে আর তার উপস্থিতি তাকে কোনোভাবেই প্রভাবিত কারণে। তাতে তিনি ভাবলেন “সূর্য কত শক্তিশালী! আমি যদি সূর্য হতে পারতাম।”
অতঃপর তিনি কর্মকর্তা থেকে সূর্যে পরিণত হলে তিনি সবার উপর প্রচণ্ড ভাবে প্রভাব বিস্তার করেন, এতে মাঠ-ঘাট পুড়ে চৌচির হয়ে গেলে কৃষক ও শ্রমিকরা তাকে অভিশাপ দেয়। কিন্তু সেই সময় তিনি দেখতে পান তার আর পৃথিবীর মাঝখানে এক বিশাল কালো ঝড়ো মেঘ চলাচল করছে, যার কারণে তার কিরণ পৃথিবীর সবকিছুতে আর প্রজ্বলিত হতে পারছে না। “সেই ঝড়ো মেঘ কতই না শক্তিশালী!” তিনি ভাবলেন। “আমি যদি মেঘ হতে পারতাম!”
তারপর তিনি মেঘে রূপান্তরিত হন। ঝড়ো মেঘ তিনি ক্ষেত-খামার ও সমস্ত গ্রাম পানিতে ডুবিয়ে দেন, আর সব লোকজন তার উপর চিৎকার করে। কিন্তু শীঘ্রই তিনি দেখতে পান যে কোনো এক মহা শক্তি তাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। তিনি বুঝতে পারলেন যে জিনিসটি তার কাজে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে তা হলো বাতাস। “বাতাস কতই শক্তিশালী!” তিনি ভাবতে লাগলেন। ! “আমি যদি বাতাস হতে পারতাম!”
অতঃপর তিনি বাতাসে পরিণত হলেন, আর তাতে তিনি বাড়ির ছাদের টাইলস উড়িয়ে দিলেন, গাছ-পালা উপড়ে ফেললেন। যার কারণে তাঁর নীচের সবাই তাকে ভয় ও ঘৃণা করতে লাগলো। কিন্তু কিছু সময় পরে, তিনি এমন বস্তুর বিরুদ্ধে ছুটে/ বইতে গেলেন যা নড়াচড়া করে না। যত জোরেই তার বাতাসে তাকে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুক না কেনো বস্তুটি অনড়। তখন তিনি লক্ষ্য করলেন বস্তুটি আসলে একটি বিশাল পাথার। তা দেখে তিনি ভাবলেন “আহা এই পাথরটি কত শক্তিশালী! আমি যদি পাথর হতে পারতাম।”
তারপর তিনি পৃথিবীর যে কোনো শক্তিশালী বস্তুর চেয়ে শক্তিশালী পাথরে পরিণত হলেন। তবে যখন তিনি একটি শক্তিশালী পাথর হিসেবে সেখানে অবস্থান করছিলেন তখন তিনি শুনতে পান হাতুড়ি আর ছেনি দিয়ে তার শক্ত পৃষ্ঠের আঘাত করার শব্দ। আর তাতে তিনি পুনরায় পরিবর্তন করার বাসনা পোষণ করেন আর ভাবেন “আমি পাথরের চেয়ে শক্তিশালী আর কী হতে পারে?”
তাতে তিনি নিচে তাকালে একজন পাথর কাটুরের অবয়ব দেখতে পান।
কোনো মানুষ যদি তার নিজের অবস্থান সম্পর্কে সন্তুষ্ট না থাকতে পারে তাহলে
তার ক্রমবর্ধমান আকাংখা প্রত্যাশিত অবস্থান অর্জন সম্ভব হলেও তাকে আরও বেশি অসন্তুষ্ট
করে তুলবে। সন্তুষ্টির জন্য সবার আগে নিজের কাজ ও অবস্থা সম্পর্কে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি
বদলাতে হবে।
ইংরেজি থেকে অনুবাদিতঅনুবাদিত। সূত্র: অজানা